Headlines
Published On:Saturday, 25 October 2014
Posted by Unknown

আলোর দিশারী শ্রদ্ধেয় বনভন্তে

আলোর দিশারী শ্রদ্ধেয় বনভন্তে

লিখেছেন:-বিশ্বনাগরিক ড. ধর্মকীর্তি মহাথের

শ্রদ্ধেয় সাধনানন্দ মহাস্থবির (বন ভান্তে)
‘‘দুল্লভো পুরিসাজঞ্‌ঞো ন সো সব্বত্থ জাযতি,
যত্থ সো জাযতি ধীরো তং কুলং সুখমেধতি।’’


দুর্লভ পুরুষোত্তম সর্বত্র জন্মগ্রহণ করেন না, যেখানেই সেই মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেন সেই দেশ ও সেই জাতি সুখ সমৃদ্ধ হয়।

পরম পূজ্য সাধনানন্দ মহাথের (বনভন্তে) একজন দুর্লভ পুরুষরত্ন। তাঁর জন্মগ্রহণে দেশ ও জাতি সুখী ও সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই তাঁর জন্ম দিবসে আমি তাঁর প্রতি আমার অন্তরের অনাবিল শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। মহাকারুণিক তথাগত বুদ্ধ বলেছেন-

‘‘ন জটাহি ন গোত্তেন ন জচ্চা হোতি ব্রাহ্মণো,

যম্‌হি সচ্চঞ্চ ধম্মো চ সো সূচি সো চ ব্রাহ্মণো। 

জটা, গোত্র বা জন্ম দ্বারা কেউ ব্রাহ্মণ হয় না, যার মধ্যে সত্য ও ধর্ম বিদ্যমান তিনিই পবিত্র এবং তিনিই ব্রাহ্মণ।

এই বুদ্ধ বাণীর আলোকে তিনি সত্যকে অবলম্বন করে মুক্তির পথ অন্বেষণ করেছেন, তাই তিনি স্বাত্বিক, পবিত্র ও বিশুদ্ধ জীবনযাপনে সক্ষম হয়েছেন।

আমি শৈশব থেকে পরম শ্রদ্ধেয় বনভন্তের বিভিন্ন গুণাবলীর কথা শুনে আসছি। দীর্ঘদিন গভীর জঙ্গলে ধ্যান সমাধি করার পর তিনি যখন লোকালয়ে আসলেন তখন তাঁর শীল সমাধি ও প্রজ্ঞা গুণ দেখে এবং সদাচার ও সংযম জীবনের অনুধ্যান প্রত্যক্ষ করে অসংখ্য মানুষ তাঁর প্রতি আকর্ষিত হয়। তাঁর অলৌকিক বিভিন্ন ঘটনার কথা শুনে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান জাতি ধর্ম নির্বিশেষে দলে দলে তাঁর কাছে ছুটে যায় তাঁকে একটু দর্শনের জন্য এবং আশীর্বাদের জন্য। চারিদিকে যখন তাঁর কীর্তি ছড়িয়ে পড়ে তখন বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে নিয়ে গিয়ে পূজা করা ও ধর্মশ্রবণ করার হিড়িক পড়ে যায়। সেই আশির দশকে আমার জন্ম জনপথ দমদমা গ্রামেও অত্র গ্রামের ধর্মপ্রাণ উপাসক বাবু ভূবন মোহন বড়ুয়ার অগ্রণী ভূমিকায় এবং গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় পরমপূজ্য বনভন্তেকে পূজা করার জন্য ও ধর্মশ্রবণের জন্য আনা হয়। সেই বিশাল উৎসবে অপার আনন্দে জনগণ মেতে উঠে। মনের সকল উদার্যে, ভক্তি অর্ঘে তাঁকে সেবা ও পূজা করার সুযোগ হয়। তখনি-ই তাঁকে আমার প্রথম দর্শন। তখন সবেমাত্র আমি নবীন শ্রমণ। তখন দেখেছি লোকালয় হতে দূরে বিলের মাঝখানে আলাদাভাবে তাঁর জন্যে কুঠির নির্মাণ করা হয়েছে। মানুষের মধ্যে কি যে আনন্দ, কনকনে শীত উপেক্ষা করে ক্লান্তিহীনভাবে মানুষ কাজ করে যাচ্ছে। ধর্মসভা আরম্ভ হলো গুরুগম্ভীরভাবে তিনি পারমার্থিক ধর্মদেশনা করছেন, লক্ষণীয় বিষয় হলো তাঁর দীর্ঘ ধর্মদেশনায় কখনো কোথায়ও আমি এবং আমার এই শব্দ পাওয়া যায়নি। এতেই বুঝা গেল আমিত্ব ত্যাগ করে সাধন জগতে অনেক দূর তিনি এগিয়ে গেছেন। তখন থেকেই তাঁর প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা ও আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। সেই শ্রদ্ধা ও আকর্ষণের টানে অনেক বার আমি তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়েছি। আমার গুরুভন্তে শ্রদ্ধেয় উপ-সঙ্ঘরাজ প্রয়াত আনন্দ মহাস্থবির আমাকে নিয়ে একবার বনভন্তের বিহারে গিয়েছিলেন। তখন আমি শ্রামণ, দেখলাম শ্রদ্ধেয় বনভন্তে আমার গুরু ভন্তেকে বন্দনা করার পর ধর্মীয় বিষয়ে অনেক হৃদ্যতাপূর্ণভাবে আলাপ করলেন এবং আমাদের রাত্রিযাপনের জন্য তিনি নিজেই সুব্যবস্থা করে দিলেন। তখন সেখানে কোন দালানঘর ছিল না, ছোট ছোট পর্ণ কুঠির-খুব সম্ভবত অতুলসেন নামে একজন বৃদ্ধ ভিক্ষু সেখানে থাকতেন, আমরা সেখানে ছিলাম। সেই ভন্তে আমার গুরুভন্তেকে পিতৃজ্ঞানে জানতেন। পরদিন পিণ্ড গ্রহণের পর আমার গুরু ভন্তেকে শ্রদ্ধেয় বনভন্তে চীবরসহ অনেক দানীয় সামগ্রী দান করেছিলেন। তাঁর শুভ জন্মদিবসে আজ অতীতের সেই পুণ্যময় সুখ স্মৃতিগুলো বার বার মনে পড়ছে।

বড়ুয়া সমপ্রদায়ের ভিক্ষুসঙ্ঘ ও দায়কসঙ্ঘের সাথে শ্রদ্ধেয় বনভন্তের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ তিনি দীক্ষা নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ পরম শ্রদ্ধেয় দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান মহাস্থবিরের নিকট। তাঁর কর্মবাচা গুরুও হলেন বড়ুয়া ভিক্ষুগণ। মহামান্য ৮ম সঙ্ঘরাজ প্রয়াত শ্রদ্ধেয় শীলালংকার মহাস্থবিরের সাথেও শ্রদ্ধেয় বনভন্তের সুসম্পর্ক ছিল। শ্রদ্ধেয় সঙ্ঘরাজ ভন্তেকে বন বিহারে এক বর্ষাবাস রেখে তিনি সেবা করিয়েছেন এবং নীরবে নিবৃত্তে ধ্যান সমাধি করার সুযোগ দান করেছিলেন।

চাকমা সমাজে তখন ত্রিপিটকে অভিজ্ঞ ভিক্ষুসংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। বড়ুয়া সমাজে তখন শাস্ত্রজ্ঞ ও ধর্ম বিনয়ে সুশিক্ষিত, পারঙ্গম এবং ত্রিপিটক শাস্ত্র অনুবাদ ও ব্যাখ্যা করার মত অনেক দক্ষ ভিক্ষু পূর্ব থেকে ছিলেন। এজন্য তিনি বড়ুয়া ভিক্ষুদের সান্নিধ্যে ছিলেন।

নব্বই এর দশকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বৌদ্ধ পণ্ডিত পরম শ্রদ্ধেয় প্রজ্ঞাবংশ মহাথের পরম পূজ্য বনভন্তের সান্নিধ্যে গমন করেন। ভন্তের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি গভীর অরণ্যে ধুতাঙ্গ সাধনা করেন। পরবর্তী সময়ে ভন্তের নির্দেশে তিনি ত্রিপিটকের অননুবাদিত অনেক মূল্যবান গ্রন্থ অনুবাদ করেন। এ ছাড়া তিনি শ্রদ্ধেয় বনভন্তের নির্দেশে বনভন্তের অনেক শিষ্যকে পালি শিক্ষা দান করেন। তাই বর্তমানে শ্রদ্ধেয় বনভন্তের শিষ্যদের মধ্যেও কেউ কেউ ত্রিপিটক অনুবাদের যোগ্যতা অর্জন করেন।

এ ছাড়াও গৃহীদের মধ্যে ডা. নিহারেন্দু তালুকদার, ডা. নিখিল চন্দ্র বড়ুয়া, ডা. সুপ্রিয় বড়ুয়া, বাবু সুভাষ বড়ুয়া, বাবু স্বপন চৌধুরীসহ আরো অনেক বড়ুয়া উপাসক-উপাসিকাসহ শ্রদ্ধেয় বনভন্তের সেবা, পূজা, চিকিৎসাসহ রাজবন বিহারের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। অতি সমপ্রতি মীরসরাই দমদমা গ্রামের যুবকেরা সম্মিলিতভাবে মাসে একদিন বন বিহারে নিয়মিত পালার সোয়াইং দান করে যাচ্ছে। অন্যান্য গ্রাম হতেও এই কার্যক্রম চলছে।

কিছু বড়ুয়ার সন্তান শ্রদ্ধেয় বনভন্তের কাছে উপসম্পদা গ্রহণ করে সুন্দরভাবে ভিক্ষুজীবন সুরক্ষা করে সুনামের অধিকারী হচ্ছে এই জন্য আমি খুবই প্রীতি অনুভব করি। পরম পূজ্য বনভন্তের পারমার্থিক ধর্মদেশনা ও সম্যক দিক নির্দেশনা বুদ্ধশাসনের ক্রম উন্নতিতে যে অবিস্মরণীয় অবদান রাখছে তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।

কয়েক শতাব্দী ধরে বঙ্গদেশে বুদ্ধধর্মের ঘোর অন্ধকার চলতে থাকে। এখানকার বৌদ্ধরা তাদের আপন রাজকীয় শক্তি হারানোর পর তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা ধর্ম একে একে সবই হারাতে থাকে। হিন্দু শাসন আমলে হিন্দু সংস্কৃতি ও মুসলিম শাসন আমলে মুসলিম সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বৌদ্ধরা নানা কুসংস্কারে নিমজ্জিত হয়। দৈনন্দিন আচার আচরণে, ধর্মে কর্মে তারা না বৌদ্ধ না হিন্দু, না মুসলিম এরূপ অবস্থার মধ্যে ছিল। গৃহীরা সঙ্ঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, কঠিন চীবর দান, পঞ্চশীল, অষ্টশীল, বিদর্শন ভাবনা ইত্যাদি বৌদ্ধিক আচার আচরণের পরিবর্তে শনিপূজা, লক্ষীপূজা, কালীপূজা, দুর্গাপূজা, মা মগেধশ্বরী পূজা, শনির ব্রত, কার্তিকের ব্রত, বদরের ছিন্নি, সেবা খোলায় মায়ের পূজা, ডাকিনী পূজা, মানত ছিন্নত, গাজীর গান ইত্যাদি মিথ্যাদৃষ্টিসম্পন্ন কার্যক্রম করতো। ভিক্ষুদের মধ্যেও বিনয়সম্মতভাবে উপসম্পদা প্রাপ্ত ভিক্ষুও ধর্মীয় জ্ঞানে অভিজ্ঞ ভিক্ষুর একবারেই অভাব ছিল। তাই তাঁরাও বুদ্ধধর্ম বিরোধী অনেক আচার অনুষ্ঠান করতেন।

১৮৬৪ সালে আরকান হতে মহামান্য সঙ্ঘরাজ ভদন্ত সারমেধ মহাথের এদেশে এসে বৌদ্ধ দায়কসঙ্ঘ ও ভিক্ষুসঙ্ঘের এ সকল অবৌদ্ধচিত কার্যকলাপ দেখে অত্যন্ত মর্মাহত হলেন। তিনি এদেশে ধর্ম সংস্কার ও বুদ্ধধর্ম পুনর্জাগরণের উদ্যোগ গ্রহণ করলেন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এদেশে থেরবাদ পুনরুজ্জীবিত হয়। তাঁর নিকট থেরবাদ বিনয় সম্মত ভাবে সুযোগ্য উত্তরসূরিগণ পুন উপসম্পদা প্রাপ্ত বিশুদ্ধ ভিক্ষুসঙ্ঘের এদেশের বৌদ্ধ জনগণ ও ভিক্ষুসঙ্ঘের নানা কুসংস্কার বিদূরিত করে তাদেরকে আলোর রাজ্যে নিয়ে এসেছেন। তাঁদের ত্যাগদীপ্ত কর্ম প্রচেষ্টার ফসল আজকের আধুনিক ও পরিমার্জিত বৌদ্ধ-সমাজ। সমতলীয় বৌদ্ধরা অনেক পরিমার্জিত পরিশুদ্ধিত ও কুসংস্কারমুক্ত হলেও পাহাড়ি বা পার্বত্য অঞ্চলে তার সুবাতাস পরিপূর্ণভাবে লাগেনি। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের বৌদ্ধরা নানা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ছিল। তারা শিব পূজা, লক্ষী পূজা, ডাকিনী পূজা, গাং পূজা, বৃক্ষ দেবতা পূজা, গৃহ দেবতা পূজা, থানমানা, ধম্মকাম, ভাতদ্যা, মাথা ধৌয়া এবং মানত সিদ্ধিতে ও রোগ মুক্তির জন্য পশুবলি পূজা ইত্যাদি করতো। লুরীগণই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানাদিতে প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। তাঁরা আগরতারা নামক ধর্মশাস্ত্র অনুসারে মৃত ব্যক্তির দেহ সৎকার, অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া ভাতদ্যা থানমানা প্রভৃতি ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে পৌরহিত্য করতেন।

তাঁদেরকে এ সকল কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার মত সেরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন ভিক্ষুর যথেষ্ট অভাব ছিল। পরম পূজ্য বনভন্তে দীর্ঘদিন অনেক দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করে বনে জঙ্গলে অনাহারে অর্ধাহারে, বিনিদ্র রজনী যাপন করে কঠোর সাধনার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক বা পারমার্থিক জীবনের উৎকর্ষতা সাধনের পর তিনি যখন বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে লোকালয়ে আসলেন তখন তাঁর বিশুদ্ধ জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করে পার্বত্যবাসীগণ তাঁর প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাপরায়ণ হলেন। ভন্তেকে তারা পরম আরাধ্য, পরম কল্যাণমিত্র ও সম্যকপথ প্রদর্শক বলে বিশ্বাস করলেন। ভন্তের প্রতিটি আদেশ উপদেশ তারা ক্রমান্বয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করলেন। তাই ধীরে ধীরে সকল কুসংস্কারের অন্ধ খোলস থেকে পার্বত্যবাসী বৌদ্ধগণ বেরিয়ে এসে আলোর রাজ্যে ফিরে এলেন। তাঁরা ধর্মমুখী হলেন, ধর্মপ্রাণ হলেন। বুদ্ধশাসনে বনভন্তের নিকট পুত্রদান করতে লাগলেন। এভাবে গড়ে উঠল বিশাল শিষ্যসঙ্ঘ। তাঁরা অরণ্যে ধ্যান করছেন। ধুতাঙ্গ পালন করছেন, ত্রিপিটক চর্চা করছেন, বুদ্ধশাসন সুরক্ষায় এগিয়ে আসছেন। এটা শ্রদ্ধেয় বনভন্তের যুগান্তকারী অবদান। আজ পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস বইছে, শান্তিবাহিনী শান্ত হয়েছে। মদ ও নেশার প্রাবল্যতা একেবারে কমে এসেছে এগুলো শ্রদ্ধেয় বনভন্তের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদানের ফসল। ধর্মপদ গ্রন্থে ভিক্ষুবর্গে তথাগত বুদ্ধ এইকথা বলেছেন-

‘‘যো হবে দহরো ভিক্‌খু যুঞ্জতি বুদ্ধসাসনে

সো’মং লোকং পভাসেতি অব্‌ভ মুত্তো’ব চন্দিমা।’’

নিতান্ত তরুন হলেও যে ভিক্ষু বুদ্ধশাসনে আত্মনিয়োগ করেন, তিনি মেঘমুক্ত চন্দ্রের ন্যায় এই জগৎকে উদ্ভাসিত করেন।

এখানে বুদ্ধশাসনে আত্মনিয়োগ বলতে বুঝাতে চেয়েছেন বুদ্ধের পরিয়ত্তি, প্রতিপত্তি ও পটিবেদ ধর্মে যিনি জ্ঞান লাভ করেন তিনি মেঘমুক্ত চন্দ্রের ন্যায় এই জগৎ প্রজ্ঞার আলোয় উদ্ভাসিত করেন।

শ্রদ্ধেয় বনভন্তে বুদ্ধ প্রশংসিত এই ত্রিবিধ ধর্মে জ্ঞান অর্জনের জন্য সংসারের মায়া মোহের সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে গহীন পাহাড়ে নিবৃত্তে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাই এই ত্রিবিধ ধর্মে তিনি অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। তাঁর প্রাত্যহিক আচার আচরণে, চলাফেরায়, জীবনযাত্রায়, কথাবার্তায়, চিন্তনে, মননে তারই প্রমাণ মিলে। তাঁর নির্লোভতা, নিষ্কামতা, নির্মোহতা ও মৈত্রীময়তা সত্যিই যে কোন মানুষের জীবনের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তাঁর নিষ্কলুষ জীবনযাত্রা বুদ্ধশাসনের প্রতি মানুষের ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অনেকগুণ বেড়ে গেছে। তাঁর প্রাত্যহিক ধর্মদেশনায় চতুরার্য সত্য, আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ, প্রতীত্যসমুৎপাদ ও নির্বাণের কথা, দুঃখ মুক্তির কথা ফুটে উঠে। বাহ্যিক কোন আবিলতা তাঁকে স্পর্শ করতে পারছে না। প্রতিনিয়ত তিনি মুক্তি, অনালয়, ত্যাগ, বিবেক ও বৈরাগ্য সুখে অভিরমিত। সার্থক তাঁর ব্রহ্মচর্য জীবন। হে সত্যদ্রষ্টা আলোর দিশারী, আপনার আলোয় বুদ্ধশাসন আরো প্রোজ্জ্বল ও আলোকময় হোক। আপনি নীরোগ ও দীর্ঘজীবন লাভ করুন আপনার শুভ জন্মদিনে এই মম প্রার্থনা।

 লেখক পরিচিতি: বিশ্বনাগরিক ড. ধর্মকীর্তি মহাথের, সভাপতি, মীরসরাই সীতাকুণ্ড বৌদ্ধ ভিক্ষু সমিতি, সহ-সভাপতি সঙ্ঘরাজ ভিক্ষু মহামণ্ডল, সভাপতি, ওয়ার্ল্ড বুড্ডিষ্ট সঙ্ঘ কাউন্সিল ইয়্‌থ বাংলাদেশ চ্যাপ্টার সদস্য; জাতি সংঘের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা সংস্থা, ওয়ার্ল্ড পার্লামেন্ট এসোসিয়েসন ও বিশ্ব আধ্যাত্মিক পরিষদ, লেখক, গবেষক ও সংগঠক।

About the Author

Posted by Unknown on 12:53. Filed under . You can follow any responses to this entry through the RSS 2.0. Feel free to leave a response

By Unknown on 12:53. Filed under . Follow any responses to the RSS 2.0. Leave a response

0 comments for " আলোর দিশারী শ্রদ্ধেয় বনভন্তে"

Leave a reply

Write here you comment

Most Popular Posts

E Paper for Buddhist News and Articles